
ডেক্স রিপোর্ট: মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে বহুদিন ধরেই চাপা প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব রয়েছে। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে বড় উদ্যোগ নিয়েছে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চীন। বহু বছর ধরেই দেশটি চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে ধাপে ধাপে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যেকার সম্পর্ক উন্নত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দুটিও সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে চীনের মধ্যস্থতায় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দুদেশের মধ্যে ধর্মীয় মতাদর্শ এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণেই কয়েক দশকের শীতল সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর থেকেই শিয়া-প্রধান ইরান ও সুন্নি-প্রধান সৌদি আরবের মধ্যে বিভেদ আরো বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, ইয়েমেন সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব তাদের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তোলে।
ইরানের স্বার্থের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করা। দীর্ঘমেয়াদে দেশটি প্রতিবেশী সৌদি আরবের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নিজের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্থিতিশীলতা অর্জন করতে চায়। অন্যদিকে, সৌদি আরবের তেলের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ তাদের ইরানের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে আগ্রহী করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এই চেষ্টায় সৌদি আরবের দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে৷ জার্মানির থিংক ট্যাংক সিএআরপিও-এর বিশ্লেষক সেবাস্টিয়ান সোনস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেলের স্থাপনায় ইরানের হামলার পর সৌদি সরকার বুঝতে পেরেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারবে না৷ সেই সাথে প্রতিবেশী ইরানের সাথে বৈরিতার সমাধান করতে হবে৷”
তিনি বলেন, তেলের উপর নির্ভর করা রিয়াদের কাছে দেশটির অর্থনীতির সফলতা নির্ভর করবে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার উপর৷ এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছে সৌদি আরব৷ তাছাড়া সৌদি আরবে মিসাইল হামলার ঘটনাও বন্ধ করতে চায় রিয়াদ৷ সৌদি আরব মনে করে,হুতি মিলিশিয়াদের প্রভাবিত করতে পারে ইরান৷
তবে বার্লিনের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের হামিদরেজা আজিজি ডয়চে ভেলেকে বলেন, হুতির সব কার্যক্রমের উপর ইরান প্রভাব ফেলতে পারবে বিষয়টি এমন নয়৷ তবে হুতি এবং ইরান একে অপরের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে৷ এই সম্পর্ক ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখতে পারে৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পর্ক পুনঃস্থাপন মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। সৌদি আরব কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যা আঞ্চলিক শান্তি ও কূটনৈতিক অবস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।