Dhaka ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশিয়ানীতে খাদ্যগুদাম থেকে ‘খাবার অযোগ্য’ চাল সরবরাহ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৫৬:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
  • ১২০ Time View

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে খাদ্যগুদাম থেকে খাওয়ার অযোগ্য ও নিম্নমানের ভিজিএফ কর্মসূচীর চাল সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকালে উপজেলার ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা এসব চাল সদর ইউনিয়নে বিভিন্ন ওয়ার্ডের হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়।

এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপকারভোগীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ১৩ হাজার ১৭৫ হতদরিদ্র পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে মোট ১৩১ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে চাল সরবরাহ করা হয়। এ খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা প্রায় চালই পুরানো, পোঁকায় খাওয়া ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিম্নমানের চাল পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপকারভোগীরা। খাওয়ার অযোগ্য চাল উত্তোলন করে তা বিক্রি করে দিয়েছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিয়াপাড়া ক্লাব মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ওই ওয়ার্ডের ১৪৪ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মাঝে ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়। ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা এ চাল অনেক পুরানো, পোঁকায় খাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত। খাওয়ার অযোগ্য চাল দেখে ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রতিবাদ করেন উপকারভোগীরা।

ভিজিএফ কার্ডধারী নার্গিস বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাগে যে চাইল দ্যাছে পুয়ে খায়া। অনেক গোন্ধ। ভাত রাইন্দে খাওয়া যায় না। মানুষরে কেউ এই চাইল খাতি দ্যায়। চাইল বাড়ি আইন্যে আস-মুরগীরে খায়াচ্ছি।’

অভিযোগ রয়েছে, কাবিখা-কাবিটাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচীর ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) যেসব ব্যবসায়ীরা কিনেন, তারা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ও সরদারদের টনপ্রতি উৎকোচ দিয়ে ভালো মানের চালগুলো নিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। আর নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য চালগুলো দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ বিভিন্ন কর্মসূচীতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

কাশিয়ানী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খাদ্যগুদাম থেকে খুবই নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হয়েছে। চালগুলো মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী। মানুষ খেতে পারবে না। বিষয়টি ইউএনও স্যার নিজেই দেখেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরণের চাল সরবরাহ না করার জন্য খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে সর্তক করেছেন ইউএনও স্যার।’

৮নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে খুবই নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হয়েছে। পোঁকায় খাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত চাল। এ চাল গরীব মানুষ খেতে পারবে না। বাড়িতে নিয়ে হাঁস-মুরগীকে খাওয়াতে হবে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মিজানুর রহমান মৃধা নিম্নমানের চাল সরবরাহের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘ভালো-মন্দ বুঝি না। গুদামে যে চাল ছিল, সেটাই আমরা সরবরাহ করেছি।’

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জান্নাত ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কাশিয়ানীতে খাদ্যগুদাম থেকে ‘খাবার অযোগ্য’ চাল সরবরাহ

Update Time : ০৫:৫৬:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে খাদ্যগুদাম থেকে খাওয়ার অযোগ্য ও নিম্নমানের ভিজিএফ কর্মসূচীর চাল সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকালে উপজেলার ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা এসব চাল সদর ইউনিয়নে বিভিন্ন ওয়ার্ডের হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়।

এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপকারভোগীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ১৩ হাজার ১৭৫ হতদরিদ্র পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে মোট ১৩১ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে চাল সরবরাহ করা হয়। এ খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা প্রায় চালই পুরানো, পোঁকায় খাওয়া ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিম্নমানের চাল পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপকারভোগীরা। খাওয়ার অযোগ্য চাল উত্তোলন করে তা বিক্রি করে দিয়েছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিয়াপাড়া ক্লাব মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ওই ওয়ার্ডের ১৪৪ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মাঝে ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়। ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা এ চাল অনেক পুরানো, পোঁকায় খাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত। খাওয়ার অযোগ্য চাল দেখে ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রতিবাদ করেন উপকারভোগীরা।

ভিজিএফ কার্ডধারী নার্গিস বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাগে যে চাইল দ্যাছে পুয়ে খায়া। অনেক গোন্ধ। ভাত রাইন্দে খাওয়া যায় না। মানুষরে কেউ এই চাইল খাতি দ্যায়। চাইল বাড়ি আইন্যে আস-মুরগীরে খায়াচ্ছি।’

অভিযোগ রয়েছে, কাবিখা-কাবিটাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচীর ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) যেসব ব্যবসায়ীরা কিনেন, তারা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ও সরদারদের টনপ্রতি উৎকোচ দিয়ে ভালো মানের চালগুলো নিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। আর নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য চালগুলো দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ বিভিন্ন কর্মসূচীতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

কাশিয়ানী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খাদ্যগুদাম থেকে খুবই নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হয়েছে। চালগুলো মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী। মানুষ খেতে পারবে না। বিষয়টি ইউএনও স্যার নিজেই দেখেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরণের চাল সরবরাহ না করার জন্য খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে সর্তক করেছেন ইউএনও স্যার।’

৮নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে খুবই নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হয়েছে। পোঁকায় খাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত চাল। এ চাল গরীব মানুষ খেতে পারবে না। বাড়িতে নিয়ে হাঁস-মুরগীকে খাওয়াতে হবে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

ভাটিয়াপাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মিজানুর রহমান মৃধা নিম্নমানের চাল সরবরাহের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘ভালো-মন্দ বুঝি না। গুদামে যে চাল ছিল, সেটাই আমরা সরবরাহ করেছি।’

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জান্নাত ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে।’