Dhaka ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশিয়ানীতে পশুরহাটে ‘খাস আদায়ের’ নামে হরিলুট

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:০৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
  • ২৫২ Time View

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: কাশিয়ানী উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুরহাট পরানপুর হাট। হাটটি গত দুই বছর ইজারা হয়নি। গেল দুই বছর হাটটিতে খাস কালেকশনের নামে চলছে হরিলুট। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে থেকে খাস আদায়ের কথা থাকলেও, আদায় করছেন পুরোনো ইজারাদার ও তার লোকজন। খাস আদায়ের নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বেশির ভাগই পকেটে ভরছে ওই ইজারাদার সিন্ডিকেট। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

গেল বুধবার সরেজমিনে পরানপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বুলবুল, জুন্নু মিনা, মো. আলী মোল্যা ও তাদের লোকজন খাস কালেকশন করছে। সেখানে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও তাঁর লোকজন কাউকে দেখা যায়নি। তবে হাটের মধ্যে একটি চায়ের দোকানের সামনে ভূমি কর্মকর্তা নাজমুল হাসানকে চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি বুধবার হাট বসে। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ১০০০ পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়। প্রতি পশু (গরু) ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে ৩০০ টাকা হারে খাস আদায় করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতি হাটে তিন লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এ বছর হাটের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, গত ১৪৩০ ও ১৪৩১ বাংলা সনে হাটটি ইজারা না নিয়েই কৌশলে খাস আদায় করছেন ইজারাদারই। চক্রটি দরপত্র অনুযায়ী ইজারা না নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে ‘খাস আদায়ের’ নামে সরকারের রাজস্ব খাতের টাকা লুটপাট করছে। এছাড়া আদায়কৃত টাকার একটি অংশ প্রতি হাটে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য, স্থানীয় মোড়লদের পকেটে যাচ্ছে।

হাটে খাস আদায় করতে দেখতে পাওয়া ইজারা ব্যবসায়ী বুলবুল মিনা বলেন, ‘চুক্তির মাধ্যমে আমরা খাস কালেকশন করছি। ইউএনওর কাছ থেকে হাট প্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে হাট নিয়েছি। প্রতি হাটে তহশিলদারের মাধ্যমে এ টাকা ইউএন অফিসে জমা দেই।’ তার ভাষ্য মতে, এ পর্যন্ত ৩৩টি হাট পেয়েছেন। যা থেকে এ পর্যন্ত ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইউএনও অফিস থেকে তথ্য না দেওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ ১৪২৯ সালে হাটটি ২ কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছিল।

এদিকে, খাস আদায়ের দায়িত্বে থাকা তারাইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সপ্তাহে হাট থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৩২৫ টাকা খাস আদায় হয়েছে। শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে বাকি ১ লাখ ৭০০০ টাকা ইউএনও অফিসে জমা দিয়ে এসেছি। তবে কতগুলো পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

খাস আদায় কমিটির সভাপতি ইউএনও ফারজানা জান্নাতের কাছে খাস আদায়ের তথ্য চাইলে তিনি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি শুনেছি একটি হাটে খাস আদায় হয়। তবে আমি নতুন এসেছি, একটু জেনে-বুঝে নিই। তারপর তথ্য দেব।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কাশিয়ানীতে পশুরহাটে ‘খাস আদায়ের’ নামে হরিলুট

Update Time : ০৯:০৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: কাশিয়ানী উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুরহাট পরানপুর হাট। হাটটি গত দুই বছর ইজারা হয়নি। গেল দুই বছর হাটটিতে খাস কালেকশনের নামে চলছে হরিলুট। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে থেকে খাস আদায়ের কথা থাকলেও, আদায় করছেন পুরোনো ইজারাদার ও তার লোকজন। খাস আদায়ের নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বেশির ভাগই পকেটে ভরছে ওই ইজারাদার সিন্ডিকেট। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

গেল বুধবার সরেজমিনে পরানপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বুলবুল, জুন্নু মিনা, মো. আলী মোল্যা ও তাদের লোকজন খাস কালেকশন করছে। সেখানে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও তাঁর লোকজন কাউকে দেখা যায়নি। তবে হাটের মধ্যে একটি চায়ের দোকানের সামনে ভূমি কর্মকর্তা নাজমুল হাসানকে চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি বুধবার হাট বসে। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ১০০০ পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়। প্রতি পশু (গরু) ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে ৩০০ টাকা হারে খাস আদায় করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতি হাটে তিন লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এ বছর হাটের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, গত ১৪৩০ ও ১৪৩১ বাংলা সনে হাটটি ইজারা না নিয়েই কৌশলে খাস আদায় করছেন ইজারাদারই। চক্রটি দরপত্র অনুযায়ী ইজারা না নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে ‘খাস আদায়ের’ নামে সরকারের রাজস্ব খাতের টাকা লুটপাট করছে। এছাড়া আদায়কৃত টাকার একটি অংশ প্রতি হাটে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য, স্থানীয় মোড়লদের পকেটে যাচ্ছে।

হাটে খাস আদায় করতে দেখতে পাওয়া ইজারা ব্যবসায়ী বুলবুল মিনা বলেন, ‘চুক্তির মাধ্যমে আমরা খাস কালেকশন করছি। ইউএনওর কাছ থেকে হাট প্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে হাট নিয়েছি। প্রতি হাটে তহশিলদারের মাধ্যমে এ টাকা ইউএন অফিসে জমা দেই।’ তার ভাষ্য মতে, এ পর্যন্ত ৩৩টি হাট পেয়েছেন। যা থেকে এ পর্যন্ত ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইউএনও অফিস থেকে তথ্য না দেওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ ১৪২৯ সালে হাটটি ২ কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছিল।

এদিকে, খাস আদায়ের দায়িত্বে থাকা তারাইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সপ্তাহে হাট থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৩২৫ টাকা খাস আদায় হয়েছে। শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে বাকি ১ লাখ ৭০০০ টাকা ইউএনও অফিসে জমা দিয়ে এসেছি। তবে কতগুলো পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

খাস আদায় কমিটির সভাপতি ইউএনও ফারজানা জান্নাতের কাছে খাস আদায়ের তথ্য চাইলে তিনি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি শুনেছি একটি হাটে খাস আদায় হয়। তবে আমি নতুন এসেছি, একটু জেনে-বুঝে নিই। তারপর তথ্য দেব।’