Dhaka ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশিয়ানীতে ১৫ মাসের হাসপাতালের কাজ ৭ বছরেও হয়নি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১০৬ Time View

কাশিয়ানী প্রতিনিধি: ৭ বছরেও শেষ হয়নি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যা ১৫ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ করে প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নেমে প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

জানা গেছে, উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলসি এলাকায় ২.১২ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। রাজধানীর কে.টি ও এম. সি নামের যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কার্যাদেশ পায়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। এর পর ২০২১ সালে একবার, ২০২২ সালে দুই বার এবং ২০২৩ সালে একবারসহ মোট চার দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাড়তি মেয়াদে ২০২৩ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সে সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। ৬টি ভবনের মধ্যে মাত্র দুটি ভবনের ছাদ এবং ইটের গাঁথুনীর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি ভবনের আরসিসি পিএল স্লাব ও একটি ভবনের টাইবিম ঢালাই হয়েছে। বাকি দুটি ভবনের সরেজমিনে দৃশ্যমান কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া সারফেস ড্রেন, বাউন্ডারী ওয়াল, রাস্তা, গার্ডেনিং, ফুটপাত, আসবাবপত্র ও বহি:বিদ্যুতায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজে হাতই দেয়নি ঠিকাদার। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অর্ধনির্মিত ভবনগুলোর অবকাঠামো।

দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, আমাদের প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে হাসপাতালটিতে যে পরিমাণ টাকা ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছে। সে পরিমাণ কাজ হয়নি। কাজটি ২০১৮ সালের শুরু করে এখন পর্যন্ত কাজটি শেষ করতে পারেনি। এর পেছনে প্রকৌশলীদের অদক্ষতা পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ না করে কার্যাদেশ দেওয়া সহ নানা দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদারকে সুবিধা দেয়া এবং জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরেজমিন ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি দেওয়ার পরেও সপ্তম বিল পরিশোধসহ নানা অনিয়মের তথ্য মিলেছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ কাজে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীরও অনিয়ম রয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়েও অনুসন্ধান ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম হাসানুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ধরনের বাঁধা পার হওয়ার পরে কাজটি শুরু হয়। ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পরে ঠিকাদারের কাজের গাফিলতি দেখা যায়। কারণ ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঠিকাদার কাজটি করতে বিলম্বিত করে। কাজটি শুরু করে সমাপ্ত করার জন্য ঠিকাদারকে বিভিন্নভাবে সুপারিশ করা হয়। যখন ঠিকাদার কাজটি শুরু না করে সর্বশেষ ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সুপারিশ করি। তবে কাজের ৫০ শতাংশ অগ্রগতি হওয়ায় সেই কাজের বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। চলমান কাজটি চতুর্থ সেক্টর প্রোগ্রামের আওতাধীন ছিল। সেটি শেষ হয়ে যায় ২০২৪ সালের জুন মাসে। পঞ্চম সেক্টর প্রোগ্রামে বাকি কাজটি অন্তর্ভুক্তি করে শেষ করার জন্য সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। কাজটি অন্তর্ভুক্ত হলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে নতুন করে কাজটি শেষ করা হবে। ঠিকাদারের কাজটি বাতিল হলে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত ও ব্ল্যাকলিস্ট করা হতে পারে। চুক্তি বাতিলের পরে পিপিআরের রুলস অনুযায়ী এবং সিডিউলের ধারা অনুযায়ী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঠিকাদারকে তার শেষ করা কাজের বিল পরিশোধের জন্য আমরা সুপারিশ করেছি। তার পাওনা অংশটুকু তাকে দিয়ে ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে কারণ চতুর্থ সেক্টর প্রোগ্রাম শেষ হয়ে যাবে।’

অতিরিক্ত বিল দেওয়ার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘পরিমাপের মাধ্যমে যে কাজগুলো করা হয়েছে, তার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ঠিকাদারকে বাড়তি কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি। কার্যাদেশ বাতিলের বিষয়টি যত সময় গৃহীত না হবে। ততো সময় তার সম্পন্ন করা কাজের বিল তাকে দেওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়নি। তার মানে ওই কাজের ঠিকাদার হিসাবে তিনি এখনও বহাল রয়েছেন।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কাশিয়ানীতে ১৫ মাসের হাসপাতালের কাজ ৭ বছরেও হয়নি

Update Time : ০৮:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কাশিয়ানী প্রতিনিধি: ৭ বছরেও শেষ হয়নি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যা ১৫ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ করে প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নেমে প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

জানা গেছে, উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলসি এলাকায় ২.১২ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। রাজধানীর কে.টি ও এম. সি নামের যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কার্যাদেশ পায়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। এর পর ২০২১ সালে একবার, ২০২২ সালে দুই বার এবং ২০২৩ সালে একবারসহ মোট চার দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাড়তি মেয়াদে ২০২৩ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সে সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। ৬টি ভবনের মধ্যে মাত্র দুটি ভবনের ছাদ এবং ইটের গাঁথুনীর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি ভবনের আরসিসি পিএল স্লাব ও একটি ভবনের টাইবিম ঢালাই হয়েছে। বাকি দুটি ভবনের সরেজমিনে দৃশ্যমান কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া সারফেস ড্রেন, বাউন্ডারী ওয়াল, রাস্তা, গার্ডেনিং, ফুটপাত, আসবাবপত্র ও বহি:বিদ্যুতায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজে হাতই দেয়নি ঠিকাদার। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অর্ধনির্মিত ভবনগুলোর অবকাঠামো।

দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, আমাদের প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে হাসপাতালটিতে যে পরিমাণ টাকা ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছে। সে পরিমাণ কাজ হয়নি। কাজটি ২০১৮ সালের শুরু করে এখন পর্যন্ত কাজটি শেষ করতে পারেনি। এর পেছনে প্রকৌশলীদের অদক্ষতা পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ না করে কার্যাদেশ দেওয়া সহ নানা দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদারকে সুবিধা দেয়া এবং জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরেজমিন ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি দেওয়ার পরেও সপ্তম বিল পরিশোধসহ নানা অনিয়মের তথ্য মিলেছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ কাজে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীরও অনিয়ম রয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়েও অনুসন্ধান ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম হাসানুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ধরনের বাঁধা পার হওয়ার পরে কাজটি শুরু হয়। ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পরে ঠিকাদারের কাজের গাফিলতি দেখা যায়। কারণ ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঠিকাদার কাজটি করতে বিলম্বিত করে। কাজটি শুরু করে সমাপ্ত করার জন্য ঠিকাদারকে বিভিন্নভাবে সুপারিশ করা হয়। যখন ঠিকাদার কাজটি শুরু না করে সর্বশেষ ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সুপারিশ করি। তবে কাজের ৫০ শতাংশ অগ্রগতি হওয়ায় সেই কাজের বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। চলমান কাজটি চতুর্থ সেক্টর প্রোগ্রামের আওতাধীন ছিল। সেটি শেষ হয়ে যায় ২০২৪ সালের জুন মাসে। পঞ্চম সেক্টর প্রোগ্রামে বাকি কাজটি অন্তর্ভুক্তি করে শেষ করার জন্য সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। কাজটি অন্তর্ভুক্ত হলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে নতুন করে কাজটি শেষ করা হবে। ঠিকাদারের কাজটি বাতিল হলে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত ও ব্ল্যাকলিস্ট করা হতে পারে। চুক্তি বাতিলের পরে পিপিআরের রুলস অনুযায়ী এবং সিডিউলের ধারা অনুযায়ী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঠিকাদারকে তার শেষ করা কাজের বিল পরিশোধের জন্য আমরা সুপারিশ করেছি। তার পাওনা অংশটুকু তাকে দিয়ে ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে কারণ চতুর্থ সেক্টর প্রোগ্রাম শেষ হয়ে যাবে।’

অতিরিক্ত বিল দেওয়ার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘পরিমাপের মাধ্যমে যে কাজগুলো করা হয়েছে, তার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ঠিকাদারকে বাড়তি কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি। কার্যাদেশ বাতিলের বিষয়টি যত সময় গৃহীত না হবে। ততো সময় তার সম্পন্ন করা কাজের বিল তাকে দেওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়নি। তার মানে ওই কাজের ঠিকাদার হিসাবে তিনি এখনও বহাল রয়েছেন।’